একটি ঈদের দিন, আনোয়ার সাহেব তার ছেলেকে ভাল কিছু দিতে চান। তিনি সামান্য অসস্থ, এ কারনে তিনি যেহেতু বাইরে যেতে পারবেন না তাই তিনি তার ভাইকে খবর দিয়েছেন।। আবার তার না যাওয়ার কারনে তার স্ত্রিও যেতে পারবে না। শান্তের কাকা বিয়ে করার আগে তাদের বাড়িতেই থাকতেন। তখন শান্তের সাথে উনার অনেক ভাব হয়ে গেছে। তাই এই ঈদের দিনেও নিজের আনন্দ মাটি করে স্ত্রিকে রেখে শান্তের শাথে আল্লাদ করতে চলে এসেছেন।শান্তের মামা জালাল সাহেব আসার একটু পরেই, শান্ত তার শাথে বেরল। শান্ত তার মামাকে এই বিশেষ দিনে পেয়ে যেন আকাশের চাদ হাতে পেয়েছে। তারা প্রথমে শিশুপার্ক গেল, তারপর তারা জাদুঘরে যাবে এমন সময় জালাল সাহেবের ফোন বেজে উঠল।
জালাল সাহেব শান্তকে নিয়ে তাড়াতাড়ি একটা গাড়িতে উঠে পরলেন। তার চোথে পানি এসে যাচ্ছে। তিনি বারবার শান্তের বিপরীত দিকে ফিরে চোখ মুছছেন হাত দিয়ে। শান্ত এটা লক্ষ্য করে তাকে কিছু জিজ্ঞাস করার সাহস করছে না। তারা যখন পৌছেছেন তখন শান্তদের বাসা ধ্বংসস্তুপ ছাড়া আর কিছু বাকি নেই।তাদের বাড়িটি ধসে পড়েছে হঠাৎ করে।তখন এ অবস্থা দেখে শান্ত আর টিকতে পারল না। তার প্রতিটি অশ্রুর ফোটা তার বাবা-মাকে করুনভাবে ডাকতে লাগল। দু’দিন পর আনোয়ার সাহেবে আর তার স্ত্রীর গলিত লাশ বেরল। জালাল সাহেবে এবার শান্তের মুখের দিকে তাকিয়ে আর নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারল না। তিনি বুঝতে পারলেন এই কিশোর ছেলেটির দায়িত্ত্ব তাকেই নিতে হবে। তাকে নিজের বাড়ি ফেনীতে নিয়ে আসেন। শান্তের এখানে আশা যেন জালাল সাহেবের ভাগ্যের চাকাকে ঘুরিয়ে দিল। ধীরে ধীরে তার ব্যবসায় ভাল সুফল আসতে শুরু করল।
এরপর অনেক সময় চলে গেছে। শান্ত এখন ফেনীর চাদগাজী হাইস্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ে। শান্তের সাথে যারা বন্ধু তাদের মধ্যে চেয়ারম্যানের ছেলে হাসান, এলাকার ক্যাডার আনোয়ার, দস্যু সোহাগ, তার ছিড়া আলু আর নেক্সট জেনেরাশন নেতা রাজু। তাদের বন্ধুত্তের মধ্যে একটাই সমস্যা আর সেটা হল শান্তের সাইজ। সে সবার থেকে সাইজএ ছোট। তাই তাকে একটা কথা সব সময় শুনতে হয়, আর সেটা হল- Size dosen’t matter.
চাদ্গাজী এলাকাটা প্রায় গ্রামে। তাই গ্রামের বর্ষা একটু অন্য রকম। এমনই একটি দিনে তাদের স্কুলে আসল রিয়া। তাও আবার শান্তের ক্লাসে। শান্তের তাকে এক অজানা কারণে ভালো লাগতে শুরু হল। এভাবে কয়েকদিন গেল।
শান্ত তখন ক্লাস নাইনে। তার মুখে গোফের রেখা ফুটে উঠেছে আর কিছু লম্বা হতেও দেখা গেল। এমন একটা সময় তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হল এভাবে, রিয়া কোমার্স নিল আর শান্ত নিল সাইন্স। কিন্তু এ বিরহ যেনো তাদের আরও কাছে আনবার জন্যই। শান্তের এখন এমন একটা বয়স, যে সময় সব ছেলেরাই মেয়েদের একটু সঙ্গ পেতে চায়। শান্তের প্রতিও এর ব্যতিক্রম কিছুই হয় নি। যত দিন যায় রিয়ার প্রতি তার দুর্বলতাও তার অগোচরেই যেন বাড়তে লাগল। তাদের যে সাব্জেক্ট সাধারণ সেটা তারা একসাথে প্রাইভেট পড়তে লাগল, ইংরেজি।
শান্তরা অন্যদের মতই স্বাভাবিক। তারাও অন্য মেয়েদের পিছনে লেগে থাকে। তাদের নিয়ে অশ্রীল কথা বলে কবিতা লেখে,গান গায়। আর মাঝে মাঝে গান আর কবিতা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। অনেক সময় এ কারনে মেয়েদের বিয়ে ভেঙ্গে যায় আর এলাকায় হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়। রিয়ারও এ কারনে বিয়ে ভেঙ্গে গেল। প্রতিদিন দিঘির পাড়ে ছেলেদের আড্ডা বসে। এ সময় তাদের সাহস দশগুন বেড়ে যায়। এলাকার মানুষের উৎপাত করে তারা আনন্দ পায়। প্রতি বৃহস্প্রতিবার তাদের মধ্যে ফুটবল খেলা হয়। খেলা দেখার জন্য তাদের মানুষের অভাব হয় না। রিয়ার প্রতি শান্তের দুর্বলতার কথা তার বন্ধুদের সবাই জানে। তাই রিয়ার কথা প্রায় প্রতিদিন উঠে। আর তখন শান্তের মুখ সকালে সূর্য উঠার মত হাসিতে ভরে উঠে। এসব কথার মাঝে তার বন্ধুরা নেশা করে, সিগারেট খায়। সে এসব খাওয়ার মাঝে কোন ভিত্তি খুজে পায় না, তাই মাঝে মাঝে সে এ নিয়ে প্রতিবাদ করে। কিন্তু অভ্যাস মানুষকে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ করে ফেলে, সেখানে কখনও ফাকা কথায় কাজ হয় না। ইদানিং শান্ত আর রিয়া প্রাইভেটে গিয়ে হাত ধরে বসে থাকে, টেবিলের নিচে দিয়ে পরস্পরের পা স্পর্শ করে আর ফোনেও প্রতিদিন কথা বলে। কিছু দিনের পর সে ইংরেজির টিচারের ট্রান্সফার হয়ে গেল। এতে কিছু দিন তাদের প্রাইভেট পড়া বন্ধ থাকল।
নতুন যে টিচার এলেন তার নাম ইমাম হোসেন। তিনি অনেক বাচাল টাইপের, আর কথার মধ্যে চাপা বেশী দেন। তিনি মাথার মধ্যে দিয়ে সিথি কাটেন, চুলে দেন হাই পাওয়ার কলপ। তিনি খুব তাড়াতাড়ি সবাইকে বস করে ফেলেন। কিছুদিনের মধ্যেই উনার মেয়ে স্টুডেন্ট এর অভাব হল না। শান্ত আর রিয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হল না, তার দুজনেও এ টিচারের কাছে প্রাইভেট পড়া শুরু করল।
রিয়ার জন্মদিনের দিন শান্ত রিয়াকে ফোন করল। কিন্তু সেদিন ফোন ধরল রিয়ার বাবা। রিয়ার বাবার কাছে নিজের পরিচয় দেয়ার পর, লোকটি তাকে আর ফোন করতে না করলো। কিন্তু ততদিনে যেন শান্ত রিয়ার সাথে সারা জীবন পার করার সপ্ন দেখে ফেলেছে। রিয়ার যে বন্ধু ছিল না তা নয়, তাদের মধ্যে করুণা ছিল তার সবচেয়ে ভাল বন্ধু। সব কথাই হত তাদের মধ্যে । করুণা শান্তের সামান্য কাজ কে খুব বড় করে বলত, কিন্তু তাতে রিয়ার কোন আগ্রহ ছিল না। কারন সে মনে করত সে তার চেয়ে শান্তকে ভাল জানে। এতদিনে রিয়ার জন্য পাত্র দেখার তাল দীগুন হয়ে গেল। রিয়ার বাবা শান্তকে কিছু বলার সাহস করছে না, কারণ তার মামা তাকে অনেক সাহায্য করেছেন, আর তিনি এলাকার একজন প্রভাশালী মানুষও বটে।
এদিকে তাদের স্যারের ডাইরীতেও একটা ছবি স্থান পেল।শান্তের বন্ধু আলমগীর উরফে আলু এ ছবি প্রথম আবিষ্কার করল। শান্ত প্রথম বিষয়টাকে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু প্রমান দেথে আর শান্ত থাকতে পারল না। সে মনে করল রিয়ার সাথে তার স্যারের সম্পর্ক আছে। সে তার সাথে দেখা করা ছেড়ে দিল। বন্ধুদের সাথে নেশা করা শুরু করল। ধীরে ধীরে সিগারেটের সংখ্যাও বেড়ে গেল। তার মামার পরিবারে একটা ছোট বোন আছে। সে একদিন স্কুল থেকে আসার সময় শান্তকে নেশা করতে দেখে ফেলে। তার মামি তার মামাকে না বলে নিজে তাকে ভাল করার চেষ্টা করে, কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। তার মামা যত দিনে জানলেন ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। শান্ত লেখাপড়ায় খারাপ করা শুরু করেছে। তিনি শান্তকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেন। এস এস সি পরিক্ষার দশদিন আগে রিয়ার সাথে তার শেষ কথা হয়। এ কারণে হউক আর অন্য কারণেই হউক পরিক্ষা অনেক ভাল হয়। এত ভাল যে তার মামা এলাকার প্রত্যেকটা মানুষকে মিষ্টি দিয়ে গোসল করালেন। এর সাতাশদিন পর তার মামা হার্ট এটাকে মারা গেলেন।
শান্ত রিয়ার হাত ধরে দিঘীর পাড়ে বসে আছে। শান্তের মুখ হাসি হাসি। সে বারবার রিয়ার দিকে তাকাচ্ছে। পকেট থেকে একটা গোলাপ ফুল বের করে রিয়াকে দিল। রিয়া যেন নিজের মুখে একটা অমৃতের হাসি ফুটিয়ে তুলল। অনেক দিন ধরে শান্ত এরকম হাসি দেখেনি। আসলেও রিয়া হাসলে তাকে অনেক সুন্দর দেখা যায়। এমন সময় কেউ যেন তার নাম ধরে ডাকলো। হ্যা, করুণা তাকে ডাকছে।
Comments (0)
See all