10-08-13 “সুজলা-শুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের…” টিভিটা অফ করে দিলাম। এসব আজাইরা প্যাচাল শুনার আমার টাইম নেই। টিভির-ঘর থেকে বেড়িয়ে আমি গেলাম বেডরুমে। একটা বিশাল শান্তির ঘুম দিব। বিছানা প্রস্তুত করে লাইট অফ করলাম। ফেনের দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছি। না, ঘুম তো আসছে না। বিছানায় অনেকক্ষন এপাশ-ওপাশ করলাম। বেশির ভাগ বিদেশী সিনেমায় দেখেছি ভেড়া গুনলে ঘুম আশে, তাই ১০০০টা ভেড়াও গুনে ফেললাম। এ ধারনাটার মধ্যে রিমিক্স দেয়ার জন্যে ভেড়ার লোমও গুনা শুরু করালাম। ৩৮, ৩৯…
তার মধ্যে একবার টেবিল ওয়াচটা দেখে নিলাম। কি কয়টা বাজে? রাত ৩ টা। আমার মাথা খারাপ না ঘড়ির মাথা খারাপ! এভাবে শুয়ে থাকার কোন মানে হয় না। দুঘন্টা ধরে শুয়ে আছি। আমি এবার উঠে বসলাম। কিছুক্ষণ চিন্তা করি। কি নিয়ে চিন্তা করা যায়? অনেক বিষয় আছে। আচ্ছা হেমা এখন কেমন আছে? সেও কি আমার মত এমন জেগে রাত কাটাচ্ছে? আমার মত তারও কি আমার কথা এখন মনে হচ্ছে? আমার নিজেকে কিছুক্ষন অনেক নিঃসংগ মনে হল। আমি একা একটা এপার্টমেন্টে থাকি, আত্মীয়-সজন কেউ নেই, কোন বন্ধু-বান্ধব নেই। বয়স আবার ৪০ এর উপরে। আমার কোন খারাপ অবস্থা হলে কেউ যে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে এমন কেউ নেই। এখন যদি আমার মৃত্যু হয়। তাহলে মাস দুই এ ঘরেই আমার লাশ থাকবে। ঘরে যেহেতু এসি লাশ এত সহজে পচবে না। আচ্ছা হেমাও কি আমার মত মৃত্যুর কথা চিন্তা করছে?
আমি পৃথিবীর জন্য এত বড় বোঝা তাহলে এখনও কেন বেচে আছি? পৃথিবী কেন আমাকে এখনও তার অণ্য দিয়ে আমাকে বাচিয়ে রেখেছে। প্রকৃতি কেন আমাকে এত নিঃসংগ করেছে? হেমাকে কেন আমার ভাগ্যে রাখে নি? তাহলে আমার পৃথিবী সম্পূর্ণ অন্য রকম হত। আমার পাশে কেউ তখন থাকত। আমি তার দিকে চেয়ে আমার দুঃখের সময় গুলো খুব সহজে পার করে দিতাম। আমি পুরোপুরি কল্পনার মানুষ। কল্পনা থেকে এখনও বের হতে পারি নি। বুঝতে পারি নি আমি এখন বাস্তবে। এসব কথা চিন্তা করে আর কি হবে? আমার অর্থ আছে। আমি ইচ্ছা করলে এখনই একজন সংগী জোগার করে আনতে পারি। আচ্ছা এখন আমার পি একে ফোন করলে কেমন হয়? তাকে বলবো, তোমার বেতন আজ থেকে ডাবল না এতকম না, তোমার বেতন আজ থেকে দশগুন। এখন থেকে তুমি আমার সকল চাহিদা মেটাবে। আমার কেয়ার করবে, আমার সাথে সফরে যাবে। আমি এবার আবার হজ্জ করতে যাব; তুমিও আমার সাথে যাবে। আস্তে আস্তে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। কাল আরেকটা দিনকে সহ্য করতে হবে। আমার পৃথিবীর কোন প্রয়োজন নেই, কারন পৃথিবী আমার প্রয়োজন মেটাতে পারে না। পৃথিবী থেকে আমি কিছুই পাই নি। আমার মৃত্যু কবে হবে।? কবে আমি এ জেলখানা থেকে মুক্তি পাব। ইস! এখন যদি হেমাকে একবার দেখতে পেতাম।
আস্তে আস্তে ভোর হয়ে আসে। আমি এখনো দেখছি আমার উপর ফ্যানটা ঘুরছে। আমার ঘরও বেশ আলোকিত হয়ে উঠেছে। আমার আর উঠতে মন চাচ্ছে না। এভাবেই আমি শুয়ে থাকবো।
কিছুক্ষণ পর আবার দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে। আমার দরজা খুলতেও ইচ্ছা করছে না। আমি ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছি। এসি আর ফ্যানের বাতাস একসাথে। ব্যাপারটায় মজার কিছু আছে, এতদিন কেন জানি লক্ষ্য করিনি?
দিনের আলো আরো স্পষ্ট হয়েছে। কেউ আমার সামনে এসে দাড়িয়েছে। তাকে দেখে মনে হল সে আমাকে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়েছে। লোকটা ভেতরে কি করে আসল? একি লোকটা দেখি আমার গলায় হাত দিচ্ছে।
ঘর অনেকক্ষন নিঃশব্দ হয়ে থাকল। কালো মত লম্বা একটা লোক বলে উঠলো, মারা গেছে।
Comments (0)
See all