মা এসে আমার কাছে কাদছে। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাদছে, ছোটদের মত হাত দিয়ে নাক আর মুখ মুছছে মাঝে মাঝে। আমার এস এস সি পরীক্ষার সময় যখন আব্বার হার্ট এটার্ক হয় তখন মা জানতে পারে বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে। আব্বা যখন হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসলেন তখন থেকেই মামারা তাকে এটা সেটা নিয়ে ধরা শুরু করল। একদিন ঘটনা এ পর্যায়ে গেল যে তারা আব্বাকে তালাবদ্ধ করে রাখল। ছোটবেলা আমি একবার অন্যায়ভাবে মার দলে ছিলাম, মনে হয় এ কারনেই আমি এখন আব্বার দল হয়েছি, মোটামুটি নিজের মনের দোষের জন্য। বদ্ধ বাসা থেকে আব্বা সেদিন সুযোগ বুঝেই বের হয়ে গেল, আমাকে আওবশ্য বলে গেল কক্সবাজার যাচ্ছি। আমি তখন এসএসসি ২০ পরিক্ষা দিচ্ছি, আর পরীক্ষা মাত্র মাঝ পর্যায়ে গিয়েছে। মামারা তখন আমাকে গাজীপুর যেতে অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত নিয়ে গেল। তারপর ফেরত আসলাম বাবায় কারন আমাকে পড়তে হবে। আব্বা দুসপ্তাহ পরে বাড়ি এলেন, সবাইকে বলল যাওয়ার সময় কোথায় গেছে আমাকে বলে গেছে। আমি আব্বার জন্য চুপ থেকেছি কিন্তু আব্বা আবার জন্য চুপ থাকতে পারেনি।
এরপর অবশ্য মাওও অন্য রকম হয়ে গেল। আগের মত কিছু না বলে কোথায় যেন চলে যায়, সপ্তাহে ২-৩ দিন বাড়িতেও থাকে না। আর আব্বাও আগের মত মাঝে মাঝেই বাড়িতে আসে না। আমাকে আর আমার ভাইকে খাওয়ানোর জন্য বাড়িতে শুধু একটা কাজের বূয়া থাকে। আমি যেন সব কিছুই শুধু দেখছিলাম, আমার যেন কিছুই করার ছিল না। একদিন মাকে বিব্রত দেখা গেল। তাকে জিজ্ঞাস করেও কোন উত্তর পাওয়া গেল না।পরে ঘটনা কিছু প্রকাশ পেল, মা নাকি আমার বয়সী এক ছেলের সাথে ভেগে গিয়েছিল, সে ছেলে নাকি মাকে ছিন্তাই করে সব রেখে দিয়েছে। পরে আব্বা আর মামারা গিয়ে সে ছেলেকে সায়েস্তা করল, সাথে আমার পরিচিত এক ভাই যে রঙ দেয়, রহমান ভাই সাকেই ভীষণ পেদানি দেয়া হল।
আব্বা কথা দিল সে নাকি আর তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে যাবে না, অখন অবষ্য আমার এসেসসির রেজাল্ট এল, কোন রকমে পাশ করলাম। এরপর আমি ভর্তি হলাম ক্যাম্ব্রিয়ান কলেজে, সাথে হোস্টেলে। আমি নিজেকে বাহানা দিতে লাগলাম, যে ইসলামে ৪টা বিয়ে করা যায়, আব্বার দ্বিতীয় বউয়ের কাছে যাওয়া কখনও থামে নি এজন্য।
আস্তে আস্তে আমাকে আব্বা বিভিন্ন ভাবে চালাতে চেষ্টা করল, একদিন আমাকে ফোন দিয়ে আব্বা বলল, তোমার মা বাসা থেকে চলে গেছেন। সে নাকি আর আসবে না।
Comments (0)
See all