(সাগরের কথায়) আমি অনেক কিছু নিয়েই চিন্তা করি। কিন্তু ভেবে পাই না চিন্তাগুলো এভাবে কে আসে। কিংবা এ ধরনের চিন্তা আসার পেছনে কারন কি। এখন যেমন একটা মেয়ে আমার পাশ কাটিয়ে গেল আর চিন্তা গুলো তাকে নিয়ে হচ্ছে। আর যে চিন্তাগুলো তাকে নিয়ে হচ্ছে সেগুলো মুখ দিয়ে উচ্চারন করার কোন যোগ্যতা রাখে না। আমি মেয়েটাকে নিয়ে আরও কিছু ভাবতাম এমন সময় আমার সামনে এসে মেয়েটা দাঁড়ালো। আমার যদি ভুল না হয় তবে বলতে পারি কোন একটা বিশেষ কারনে তার ঠোট-দুটো নড়া শুরু করলো। সম্ভবত সে কাউকে কোন কথা বলছে। কিন্তু আমার দিকে তাকিয়ে কেন? আমি কথাগুলো শোনার চেষ্টা করলাম।… ওহ, কথাগুলো দেখি আমাকেই বলছে!
“এ্যাই”- মেয়েটার কন্ঠ।
আমি আমার জগৎ সম গভীর চিন্তা থেকে পূর্ণ রূপে বের হলাম। মাথাটাকে স্থির করে ভালো করে সামনের বস্তুটার দিকে মনোযোগ দিলাম। মেয়েটাকে প্রথম যেমন দেখেছিলাম সেরকম তো না। যাকে দেখছি সে একজন ভয়ঙ্কর মুখমণ্ডলে পরিবেষ্টিত নারী। নারী বললে ভুল হবে, মেয়েই ঠিক আছে, কিংবা বালিকা বললেও দোষ হবে না। অথবা গ্রাম্য ভাষায় ‘ছেরি’, ‘ছেমরি’ এসবও বলা যেতে পারে। সবগুলো দাঁত বের করে দিয়ে চিৎকার করছে। আমি আজ পর্যন্ত কাউকে এরকম সবগুলো দাঁত বের করে চিৎকার…কাশি…কাশি…কথা বলতে দেখিনি।। আমি মেয়েটাকে আবার শোনার চেষ্টা করলাম। আস্তে আস্তে মেয়েটার উচ্চারিত শব্দগুলো আমার কানে স্পষ্ট হয়ে উঠে।
“এ্যাই ক্ষ্যাত এ্যাই।”- মেয়েটার চিৎকার।
আমি নিজেকে আয়নার সামনে ধরে রাখিনি। তাও বুঝতে পারছি আমার চোখে মুখে ক্লান্তি। এতক্ষন ধরে ৭ কাপ চা খেয়েছি বলে ঘুম ঘুম ভাবটা নেই। আর যদি পোষাকের দিকে খেয়াল করি তবে মাটি রঙের একটা গেঙ্গি আর সাদাই পায়জামা ছাড়া কিছু চোখে পরবে না। এ অবস্থায় আমাকে নিতান্ত নম্র, ভদ্র ঘাস খাওয়ায় মনযোগী প্রানী হিসেবে কল্পনা করা যায়, এক কথায় ভালো মানুষ। এটা বলার কারন হল আমি এখনও কারো তেমন অপকার করেছি বলে আমার মনে পরে না। কিন্তু এই মেয়ে আমাকে ক্ষ্যাত ডাকছে! কেন! ক্ষ্যাত ডাকার জন্য কি দুনিয়াতে লোকের অভাব আছে? আমাকেই কেন ডাকতে হবে? হতে পারে মেয়েটির বয়স কম; ২০-২৫ বছরের বেশি হওয়ার কথা নয়। তাও মেয়েটির আমাকে ক্ষ্যাত বলা শোভা পায় না। তবুও মেয়েটির প্রতি আমার মায়া লাগছে; কারন তার কুৎসিত কথাবার্তা, আমার হৃদয়ে দক্ষিনা বাতাসের দোলা দিল।
“এ্যাই শালা, কথা শুনিস না।”
কি সুন্দর কথা।
“ঘরে মা-বন নেই?”
আমি বেশ হাসি মুখেই বলে উঠলাম, ঘরে মাও নেই, বোনও নেই।
আমার কখায় মেয়েটা শান্ত হল কিনা বোঝা যাচ্ছে না। শুধু তাকে কয়েক সেকেন্ডের জন্যে চুপ দেখা গেল। এ চুপ খাকার কারনেই হউক আর অন্য কোন কারণেই হউক, আমার হৃদয়ে গোপন করা বহু দিনের আকাংক্ষা প্রকাশ পেতে চায়…
“আমার উড়না নিলি কেন?” এ কথায় যেন আমার উপর বজ্রপাত হল। আমি কোন দুঃখে মেয়েটার উড়না নেব? আমি মেয়েটির দিকে ভালো করে তাকালাম, সত্যিই তো তার উড়না মিসিং। কিন্তু মেয়েটা আমাকে কথা শোনাচ্ছে কেন? এবার আমি আমার হাতের দিকে তাকালাম, হাতে কিছু একটা ধরে আছি বুঝতে পারছিলাম। এ্যা কি! আমার হাতে দেখি মেয়েটার উড়না! তার মানে দুটা জিনিশ হতে পারে, এক- মেয়েটার কথা সত্যি, দুই- কেউ আমার হাতে উড়নাটা ধরিয়ে দিয়েছে। যা হোক, আমি আর ভালো মানুষ নই আগের মত যে নিজের কাছে বলতে থাকব আমি এটা করতেই পারি না। কিন্তু মেয়েটা আমাকে থাপ্পর মারল না কেন? তাহলে তো একটা জিনিশই প্রমানিত হয়, মেয়েটার চরিত্রে দাগ আছে, তাই না? আমি তার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিলাম। মেয়েটিকে সামান্য বিভ্রান্ত দেখা গেল। এ পর্যায়ে আমাদের দিকে আশেপাশের কয়েকজন লোকও এগিয়ে এল। ছোট সাইজের একটা লোক মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে ম্যাডাম?
“দেখুন না, আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ এই লোক আমার পেছনে হাত দিয়েছে তারপর আবার আমার উড়না নিয়েছে টান দিয়ে।”
আমার অবশ্য কাজ আছে। এখানে আর কতক্ষন? আমি তাই বেঞ্চ থেকে উঠে দারালাম। আমার মুখ ভরতি দাড়ি আছে এই হিসাবে একটু ভাব দেখিয়ে চুলকালাম। লোক গুলোকে দেখছি, তারা আমাকে ক্ষ্যাত ভেবে ছেড়ে দিবে এমন কোন কারন নেই।
লোকগুলোর মধ্যে পাঞ্জাবি আর বাহারি পেন্ট পড়া একজন বলল, “ ওহ বুঝেছি, ইভটীচিং।”
হায় রে আমার বোঝার পাবলিক বিপক্ষে একজনকে পেয়ে কত ভাবচোখে মুখে, সিনেমাগুলোতে ভাব দেখতে পেয়ে এখন দুনিয়াটা হয়ে গেছে নায়ক টাইপের লোকের। যা হওক, আমিও ভাব দেখাতে পারি এটা প্রমান করার জন্যেই হোক আর অন্য কিছুর জন্যেই হক আমি লোক গুলোর দিকে আর তাকালাম না। মেয়েটিকে দেখছি। সে আমার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে সেটা লক্ষ্য করছি। ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে বলেই তার চোখ দেখতে সমস্যা হচ্ছে। আমি তার চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছি। চোখের দৃষ্টিতে অনেক কিছুই থাকে। চোখের এই বৈশিষ্ট সম্পর্কে একটা গান শুনেছিলাম। ঐ যে, চোখ যে মনের কথা বলে, চোখে চোখ রাখা কিছু নয়…। আমি অবশ্য চোখ দেখে মানুষের অনেক মনের কথা আচ পারি। মানুষকে সব কিছু দিয়ে দুনিয়াতে পাঠানো হয় না। আবার যাকে কোন একটা দিক থেকে একটু কম দেয়া হয় তাকে আবার অন্য কোন একটা দিক থেকে কিছু একটা বেশি দেয়া হয়। সম্ভবত আমার চোখের ভাষা আচ করার ক্ষমতা সেরকম একটা কিছু। আমি মেয়েটাকে দেখে বুঝতে পারছি সে আমাকে পাবলিকের পেদানি খাওয়ানোর চিন্তা ভাবনা করছে।
লোকগুলোর মধ্যে আরও একজন বলে উঠল, “ম্যাডাম আপনি চিন্তা করবেন না আমরা একে সামলে নিব।” এরা হচ্ছে সেই জনতা যারা প্রতিদিন সকাল বেলা বউয়ের ছেকা খেয়ে অফিসে কাজ করতে যায়, সেখানে গিয়ে আবার অফিসের বস-এর ছেকা খায়, আর এই বিকাল বেলা এরকম একটা পার্কে আশে মাথা ঠান্ডা করতে। আর আমার মত কাউকে মারার সুযোগ পেলে তো আর কথাই থাকবে না। ম্যাডাম কথা শুনেই আমাকে উড়নাটা ফেরত দিতে বলল।
আমি বললাম, “দেব না, এটাতে দুর্গন্ধ। কোন একটা ভাল সাবান কিংবা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধূয়ে আগামীকাল তোমার বাসায় দিয়ে আসব।”
এ কথার পর ম্যাডামের বিভৎস চেহারা রাগে আরো বিভৎস দেখাচ্ছে। আমার আরেকটা গানের কথা মনে পরছে, চুমকী চলেছে একা পথে… রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো।
“ওই! ম্যাডামের উড়না দে”- এবার অন্য একটা লোক বলল। লোকটার কথা বলার স্টাইল আমার পছন্দ হলনা তাই কথাটা শেষ করার আগেই আমি তার মুখে থুথু দিলাম। থুথুটা আসলেই তার মুখের দিকে গিয়েছে কিনা সেটা দেখার জন্য লোকটার দিকে তাকালাম। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে আমার অর্ধেক থুথু গিলে ফেলেছে।আমি চিন্তা করলাম এবার একশনে যাব। তাই আমার গুপ্ত পকেট, যেটা আমার তলপেটের নিচে অবস্থিত সেখান থেকে আমার লোহা কাটার মত ধার ছুরিটা বের করলাম। অবশ্য এ পকেটটা শুধু আজকের জন্যই আমার সাথে আছে।
তাহলে… কাকে খুন যায়?
লোকগুলোর চোখে মুখে ভয় দেখছি। এদের দেখে এইডস রুগী মনে হচ্ছেবে। এ যুগে মানুষ সবকিছু পেয়েছে কিন্তু সবচেয়ে মূল্যবান জিনিশ, সাহস সেটাকে হারিয়েছে। আমি আর কোন দিকে না তাকিয়ে মেয়েটিকে বললাম, হ্যালো মিলা। মেয়েটার মাথার উপর কেউ ট্যাচু অফ লিবারটি তুলে ধরলেও মেয়েটি এত অবাক হত না যতটুকু আমার এ কথায় হয়েছে। আমি এখানে লোকগুলোর দিকে আবার দৃষ্টি দিলাম, তাদের বললাম, “যে যেখান থেকে এসেছিস সেখানে চলে যা, না গেলে এক একটাকে ঢরে নুনুতে পোছ দিব সালারা।” লোকগুলোর যে আসলেই সাহসের অভাব সেটা প্রমানিত হল। আমার বলতে দেরি হল কিন্তু তাদের দূরে যেতে বেশি সময় লাগল না। সবাই বেশ নিরাপদ চলে যাচ্ছে। আর মিলা মেয়েটা হা করে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে।
আশে পাশে কোন পুলিশ নেই সেটা আমি আগে থেকেই জানি। এতে আমার জন্য সুবিধা হয়েছে। কারও দৌড়ে গিয়ে পুলিশ নিয়ে আসার কোন সম্ভাবনা দেখছি না। সবাই নীরব দর্শক।
“মিলা, তোমার হেন্ডব্যাগটা দাও।”- আমি মেয়েটাকে আলফা কন্ঠে যেন আদেশ করলাম।
“আপনি আমার নাম কিভাবে জানেন?”
আপনি? বেশ ভালো তো। একটু আগে মেয়েটা নাকি আমকে ক্ষ্যাত ডাকছিল কে বিশ্বাস করবে এটা?
মেয়েটা আরেকবার আমার দিকে চেয়ে তাড়াতাড়ি হেন্ড-ব্যাগটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। হ্যা আমি মেয়েটার সাথে চোর-পুলিশ খেলাছি। এই মেয়েটাকে আমার বুঝতে হবে। এজন্য আমাকে কিছু বিষয়ে অগ্রদূত হতে হবে, ভাগ্যকে নিজের হাতে গড়তে হবে।
মেয়েটার চোখের দৃষ্টি বেশির ভাগটা ঘৃনার। যা হোক, তার ঘৃনার চোখকে ভালোবাসার আর হেন্ড-ব্যাগটাকে রেড রোজ কল্পনা করে আমি দ্রুত সরে পড়লাম। লোকজনের হাব-ভাব ভালো দেখছিলাম না। পার্ক থেকে দৌড়ে বের হয়ে ভাবলাম বাসায় তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে এখন, ওড়নাটাকে ধুতে হবে। আচ্ছা ওড়না কিভাবে ধোব? সাবান দিয়ে না ডিটারজেন্ট দিয়ে? আমার বাড়িতে যেতে হবে এটা কোন কথা না, যেকোন একটা বাড়িতে ঢূকে কাপড় সাফ শুরু করে দিলেই হয়। আচ্ছা সময়ই বলে দিবে এই ওড়নার ধোয়া কোথায় হবে।
রহমত আমার বর্তমান ড্রাইভার। পার্ক থেকে বের হয়েই দেখলাম সে সাদা একটা প্রাইভেট কারের পাশে বেশ ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে দুদিন হল কাজে যোগ দিয়েছে। এ কারনেই হয়তো সে আমার কথা বোঝে না। আমি তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি তারপরও সে আমাকে দেখছে না। অথচ আমি তার চোখের সামনেই আছি।
আমি একেবারে তার শরীরের সামনে এসে দাড়ালাম। আমার হাতে একটা লেডিস ব্যাগ আর কাধে ঊড়না দেখে সে একটা হারামি হাসি দিল। আমার এ হাসি সহ্য হল না। তাকে একটু রাগ দেখাতে ইচ্ছে করছে। তাকে বোঝাতে হবে আমি তার বস। এতে সে হয়তো পরে হারামি ভাবটা আর দেখাবে না।
“হাসছ কেন? তোমাকে না বলেছিলাম আজকে আমার লাল গাড়িটা আনবে?”
“সরি স্যার ভুল হয়ে গেছে। “- রহমতের কথা।
“ভুল হবে কেন? ফাইজলামি করো আমার সাথে?”- আমার রাগী মেজাজ।
“লাল গাড়িটার স্যার মেন্যুয়েল গিয়ার। আর আমি স্যার শুধু অটো গিয়ারের গারি চালাতে পারি।”
গাড়িসব চালাতে পার না তো আগে কেন বল নি?- আসলেও এটা কেমন কথা?
“আমি স্যার গরীব মানুষ। ঘরে বউ বাচ্চা। চাকরির জন্য স্যার একটু সত্য লুকাতে হয়েছে।”= সাথে রহমতের সেই হারামি হাসি।
রহমত গাড়ি থামাল গলির সামনে। আমি নিশ্চিত এখানে রাত্রে ছিনতাই হয়। আসার সময় এখান দিয়ে হেটে আসলে কেমন হয়? তারা আমায় ছিনটাই করবে আর আমি তাদের ছিনতাই করব। এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে, রহমতের বাসায় কিছুক্ষন থেকে মিলার ওড়নার ব্যবস্থা করতে হবে, তারপর রাস্তায় নেমে পরব।
রহমত?- আমি রহমতের সাথে হাটতে হাটতে তার সাথে কথা বলছি।
জি স্যার।
তোমার বাড়িতে কে কে আছে?
স্যার, আমি আমার স্ত্রী আর দুই মেয়ে।
দুজনই মেয়ে?
জি স্যার।
তারা লেখাপড়া করে না?
জি স্যার, বড় জন এবার এসএসসি দিবে আর ছোট জন জেএসসি।
তুমি তো দেখি আধুনিক বাবা। রহমত এবার মুছকি হেসে দিল।
রহমতের বাড়ি পৌছেছি একদম পুরো সন্ধ্যা বেলায়। বাড়িটা টিনের, বাইরে থেকে কেবল টিভি আর কারেন্টের তার ঢুকে গেছে। ভিতরে ঢুকে দেখি অনেক আসবাব সহ তাদের চারজনের খুব ভালভাবে এটে যাওয়ার ব্যাবস্থা আছে। আমি এখানে যে কারনে এসেছি সেটা করতে হবে, হাগু।
আমি কিছু লক্ষ্য করলাম, আমার ভালো খাতির যত্ন শুরু হয়ে গেল। বেটার বউয়ের খবর জানি না, কারন আসার পর ঘোমটা ছাড়া আর কিছু দেখি নি। তবে দু মেয়েই খুব সুন্দরি। কোন দিন বিয়ে করলে তাদের মধ্যে থেকে একজনকে বিয়ে করার সম্মুখ-সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। বড়টার লজ্জা বেশি, আমার সাথে শুরুতে শুধু একবার দেখা করতে এসেছে,পরে আর আসে নি। আমার ধারনা সে বাড়ি থেকেও বেশি বের হয় না। আর বের হলেও বোরকা পরে বের হয়। তবে ছোটটা অনেক বেশি চঞ্চল। যা আমার বিয়ের উপযুক্ত হওয়ার একটি বিশেষ গুন। আমি রহমতের বেডে শুয়ে পরলাম। একটাই বেড। মেয়েদুটো সম্ভবত মাটিতে শোয়। তার বউ আর বড় মেয়েটা পাশের রান্না ঘরে আছে। ছোট মেয়েটা বসেছে আমার পাশে আর বকবক করেই যাচ্ছে। আমি দু-এক্টা শব্দ শুনলাম। সম্ভবত তার জীবনের কোন বিশেষ ঘটনা।
আমি আর রহমত রাতে অনেকক্ষন হাটলাম ছিন্তাই হওয়ার আশায়। ছিন্তাইকারীদের সবার কি ইবোলা হয়েছে নাকি? না তাদের পুন্দে ব্যাথা? এরপর গাড়িতে ফেরত এসে দুজন মিলে মদ খেলাম মাঝ-রাত পর্যন্ত। আর গেঙ্গি পড়ে থাকতে ভাল লাগছিল না।আমি রহমতকে বললাম, “আমার গেঙ্গিটা তুই পর আর তোর শার্টটা আমায় দে।”
রহমতের শার্টটা পরে আমার মনে হল আসলেই আমি একটা ক্ষ্যাত না হলে ড্রাইভারদের সাথে মদ খাই? যা হোক। একটা আইডিয়া মাথায় এল। রহমতকেও আইডিয়াটাতে উৎসাহ দেখলাম। আমরা রাস্তার সাইড থেকে ইট সংগ্রহ করতে লাগলাম। আশেপাশে যতগুলো দালান আছে সেসবগুলোর কয়েকটার গ্লাস ভাঙ্গব। প্রথমে একটা বিল্ডিং টার্গেট করলাম। এ ধরনের আইডিয়া কেন এসেছে বুঝলাম না। মনে হয় রহমতের শার্টের জাদু। আমরা পজিশন নিলাম।
আমরা ঘুমিয়ে গেলাম বাড়িটার ভাংগা কাচের উপরেই।
“ওই শালা! ওঠ।”- আমাকে কেউ একজন উঠালো। আস্তে আস্তে লোকগুলো আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠল, পুলিশ এসেছে। বাড়িওয়ালা কিংবা আশেপাশের কেউ এদের মনে হয় খবর দিয়েছে। আজ পর্যন্ত জেল-হাজতে যাইনি। আজ যেতে ইচ্ছা করছে। একটু ঘুরে আসি, নাকি? আমার মাথা প্রচন্ড ঝিম ঝিম করছে, ইচ্ছা করছে মাথা থেকে শরীরটা আলাদা করে ফেলি।
আমাদের গন্তব্যে নিয়ে আশা হল। তারপর যা বোঝা গেল, আমরা শিক্ষা মন্ত্রীর শালার বাড়ি কাচ ভেংগেছি। আমি চিন্তা করলাম আমি কিছু আগে থেকেই বলব না, দেখি ব্যাপারটা কতদূর যায়। কিছুক্ষন পর ওসি হাবিলদারকে বলল, আমাদের যেন ডলা দেয়া হয়। আমার মনে হল, আমিও জিনিসটা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত। তবে রহমতের ব্যাপারটা জানি না। আমাকে যে ডলাটা দেয়া হল সেটা তলপেটে। আমি সম্ভবত পায়জামায় প্রস্রাব করে দিয়েছি। কিন্তু আমার শারিরিক অন্য কোন রি-একশন নেই। যেখানে যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি। ওসি খেপে গেল। হাবিলদার তার কানে কানে যেন কি বলল। এতে ওসি তার জীবনের মনে হয় সবচেয়ে ভয়ানক কথাটা বলল, “হারামিকে নেংটা কর”- তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “কার বাড়ির কাচ ভেঙ্গেছিস এবার বুঝবি। শালা- বাইনচ্যুত।”
আমার কাপড় খোলা হচ্ছে, আমি এবার ওসির মুখে হারামি একটা হাসি দেখতে পাচ্ছি যেটা আরও তীব্র হল। তার হাসি!, এ হাসির সাথে আমি পূর্ব পরিচিত। প্রত্যেক বাংলাদেশী এ হাসির সাথে পরিচিত। এ হাসি রাক্ষস ইয়াহিয়ার হাসি। আর তার চোখও শকুনের মত আমার দিকে চেয়ে আছে, যেন আমাকে এখনি খেয়ে ফেলবে। এমন সময় ওসি আমার নিম্নাঙ্গের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, শালা দেখি আসলেই হিজড়া।
Comments (0)
See all