রোবটটিও আস্তে আস্তে স্লিপ মোডে চলে যাচ্ছে। কারণ এখন কিশোর ছেলেটি আবার জাগবে হাজার হাজার বছর পর, কোনো এক অচেনা গ্রহে; হয়তো কোন এক অজানা সৌরজগতে। এতদিন পযর্ন্ত তার অবসর।
১
মহাকাশ যানে পরপর তিনবার শব্দ হল। রোবটটি স্লিপ মোড থেকে থেকে উঠে গেল। মহাকাশ যানের সিগন্যাল বুঝতে তার কোন অসুবিধা হল না। সে কিশোর-বালকটিকে জাগাতে ক্যাপ্সুলের কাছে গেল। লাল আলো জলছে এমন একটি বোতামে চাপ দেয়ার সংগে সংগে ক্যাপ্সুলটি খুলতে শুরু করল। বালকটি ধীরে ধীরে নিজের চোখ খুলল।
রোবটটি তাকে বলল, “ক্রিক আপনার জাগরণে আপনাকে সাগত জানাচ্ছে। “
এমন সময় বালকটি মৃদু সরে বলল, “হ্যালো, ক্রিক।”
ক্রিক বালকটিকে তৈরি হতে সাহায্য করল, তারপর তার জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করল।
“আমরা কি পৌছে গেছি?”- বালকটি জিজ্গেস করল।
এইচ আর যে কিনা এই সীপেরর মেইন রোবট সে আমাকে বলেছে, আমরা শ্রীঘ্রই একটা গ্যালাক্সিতে প্রবেশ করছি। তার পর ১ মিনিটের একটা হাইপার ড্রাইভ দেয়া হবে। এখানে একটা বাসযোগ্য গ্রহ পাওয়া গেছে। দেখতে নাকি অনেকটা পৃথিবীর মত।
“সেখানে কি আমার মত কেউ আছে?”
“থাকতে পারে। আমরা অবশ্য বর্তমান সময়ের আগে গ্রহটাতে প্রবেশ করব, আর আমরা এমন ভাবে থাকব যে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকলে আমাদের দেখতে না পারে। বুঝতে না পারে আমরা গ্রহটাতে অবস্থান করছি। আপনি ঘাবরাবেন না মহামান্য। সবকিছু ঠিক ্থাকবে আশা করি।”
“আমাকে নাম ধরে কেন ডাকছ না, কিসের মহামান্য?”
“আপনার নাম নেয়া আমার প্রগ্রামিং-এ নেই।”
“নেই তো এখন নিয়ে নাও। আর আমাকে তুমি বলে ডাকবে। এটা বলে বালকটি খাওয়া শেষ করে হাত-মুখ মুছতে লাগল।”
“আদেশ পালিত হল।”- রোবুটটি উল্লেখ করল।
“কি আবোল-তাবোল বকছ? ঠিকভাবে কথা বল। বুঝেছি তোমাকে উদাহরণসহ বোঝাতে হবে। “
“আমি বুঝতে পেরেছি।”
“না, তুমি বুঝতে পারনি। আমি বোঝাচ্ছি।”- ক্রিক এবার চুপ হয়ে গেল, আর বালকটি বলতে থাকল- “মনে কর, আমি খাবার খাচ্ছি অনেক দ্রুত। তখন তুমি বলবে- হিমান, একটু আস্তে খাও। ধর, আমার গোসল করার টাইম হয়েছে। তখন তুমি বলবে, হিমান, গোসলের টাইম হয়েছে। এভাবে। বুঝেছ?”
“হ্যা।”
“পরে যদি আবার আবোল-তাবোল কথা বল তবে তোমাকে খোলা ছাড়া আমার আর কোন উপায় থাকবে না।”- এতে রোবটটি ক্রিক ক্রিক শব্দ করল।
মহাকাশযানের সাইজ অনেক ছোট। তাকে এত আগে জাগানো হয়েছে এজন্য তার রাগ লাগছে। ক্রিক হিমানের কাছ থেকে রাগের অনুভূতি সিগন্যালে পেয়ে চুপ করে আছে। এখন কথা বললে হয়তো তার রাগ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এজন্য তাকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। হিমানের কথা বলতে ইচ্ছা করছে। তাই সেই প্রথম কথা শুরু করল।- “বাবা মার কথা মনে পড়ছে। পৃথিবী কী এখনও আছে?”
“না। অনেক আগেই ডেসট্রয় হয়ে গেছে।”-
“ক্রিক জান আমার মা শেষ দিন কি বলেছিলো।”- এমন সময় মহাকাশ যানের কম্পিউটার বলল- আমরা হাইপার ড্রাইভ দিচ্ছি, আপনারা প্রস্তুত হন। হিমান একটা চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “কি যেন নাম বলেছিলে যান কম্পিউটারের?”
“এইচ আর।”
মহাকাশ যানের ভিতরের আলো আস্তে আস্তে কমে যায়। হিমান তার চোখ বন্ধ করে। তার সামনে ভাসতে থাকে তার মায়ের চেহারা, তার বাবার চেহারা, তার শৈশব।
ক্রিক তারদিকে তাকিয়ে আছে। সে লক্ষ করল হিমানের চোখে পানি, রাসায়নিক সংকেত এন এ সি এল প্লাস এইচ টু ও। মানুষ জানি কেমন, এটাকেই নাকি বলে দুঃখের প্রকাশ। “আচ্ছা এ অনুভূতি যদি আমার থাকত, তবে কি আমিও এভাবে আচরণ করতাম?”- ক্রিক নিজেকে জিজ্ঞাস করল।
হঠাৎ করে মহাকাশে এক ঝলক আলো গর্জন করে উঠে। এমন সময় গ্রহটির স্যাটলাইট থেকে একটি সিগন্যাল যায়, যে স্যাটলাইটটি রাখা হয়েছে মহাকাশের বিভিন্ন পরিস্থিতি পযবেক্ষণের জন্যে গ্রহটা থেকে।
২
“আজ না তোর স্কুল আছে উঠবি না?”
“উঠছি মা।”- লাল রংগের বিছানার চাদরে মুরানো বিছানা থেকে যে মেয়েটি মুখের উপর থেকে কাপড় সরালো তার নাম রিতি। সে তার কোল থেকে কোলবালিশটি ছুড়ে ফেলে দাত মাজতে বাথরুমে গেলো। তার মা টেবিলে খাবার দেয়া শুরু করেছে। খাবার সামনে নিয়ে বসেছে তার নানা। সে দৌড়ে এসে একটা টোস্ট আর একটা কলা নিয়ে দরজা পযর্ন্ত চলে গেল। এমন সময় তার মা তাকে বলল একটু থামতে।
রিতি খানিকটা রেগে বলল, “মা তোমাকে কতবার না বলেছি আমাকে পেছন থেকে ডাকবে না।”
“আমি তো তোর মত কাচি-বাছুর নই যে তোকে ওভারটেক করে তোকে ডাকতে পারব।”
“মা, ভালো হবে না বলছি। আমি কিন্তু পরীক্ষায় ফেল করে তোমাকে স্কুলে নিয়ে গিয়ে কথা শোনাব। “
“ঠিক আছে বাবা, তোর কাছে মাফ চাই।”
“আচ্ছা বল, কেন ডেকেছ? আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
“তোর খোরশেদ আঙ্কেল আসবে। সাথে ফাহিমও।”
“আমি বুঝিনা খোরশেদ আনকেলের প্রতি তোমার এত কিসের দরদ।”- রিতির মা কথাটা না সোনার ভান করে বলল, “আমরা ট্যুরে যাচ্ছি। তাড়াতড়ি বাসায় চলে আসবি।”
“কি? ট্যুরে তাও এদের সাথে, নো ওয়ে।”
“পটর পটর বলতে শিখেছিস, না। কখা না বলে তাড়াতাড়ি যা বলছি করবি।”
“না।”
“কি বললি-… “-রিতির মা আরো কিছু বলত, রিতি দৌড় দিলো।
রিতির মা আর একা থাকতে পারছেন না, তাকে এখন একটা ভবিশ্যত নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বেশি দিনের কখা না। এইতো সেদিনই তার স্বামী এক রূপসীকে বিয়ে করে বাড়ী থেকে চলে গেলেন, তখন থেকে সে রিতিকে নিয়ে একলা থাকেন। তখন রিতির বয়স ছিল ৮ বছর আর এখন ১৬। সেই ছোট্ট রিতিকে আজো তার মনে পরে, মেয়েটা বার জন্য কত কাদতো। রিতির নানাও তখন মারা যায়, তার বাবার অগাত সম্পত্তির কারণেই তাদের কোন অসুবিধা হয়নি। যা হবার হয়েছে, তার আর পেছনে ফেরা হবে না। যা হবে তা হবে সামনে।
“আপা ১৫ টাকা ভাড়া।”
“১৫ টাকা? আপনার মাথা খারাপ হয়েছে। আমার স্কুল থেকে যদি আমি প্লেন দিয়েও আসি তাও ৫ টাকা ভাড়া চাইবে।”– রিতি বলল।
“তাহলে প্লেন দিয়েই আসেন না। আমার মাথা খান কেন?”
“নে তোর ১৫ টাকা। আর কোন দিন তোর ঠেলায় উঠেছি তো আমি তোর মরা মুখে থুথু দেই।”
“কি?”
“তোর কবরের উপর পেশাব করি।”
“আমি হিন্দু।”
“তো কি? তোর লাশের উপর কুত্তার টয়লেট।”
“কি?”
“যা ভাগ।”- ট্যক্সিওয়ালা তার দিকে বিষদৃষিতে তাকাল। রিতি এটা লক্ষ্য না করে সামনে চলা শুরু করলো। তার মা বাসার দরজা খুলল। রিতি ট্যক্সিওয়ালার বদনাম করতে করতে ঘরে ঢুকলো। ভেতরে তার খোরশেদ আঙ্কেল বসে আছে। কিছুক্ষণ পর বাথরুম থেকে ফাহিম বেরুল।
হাই!-ফাহিম বলল।
“তোমার মা আর আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি।”- ফাহিমের বাবা তাদের সামনেই বলল।
“কি? মা এসব কি শুনছি?”
“তুমি ঠিকই শুনেছ। আমরা প্রথমে ঠিক করেছিলাম একলা যাব। কিন্তু তোমাদের একলা রেখে যাওয়া যায় না।”
“তার মানে ট্যুরে যাওয়ার আসল কারণ এটা।”
“হ্যা।”
“আমি যাব না।”
“তাহলে থাকবে কোথায়।”
“কেন বাসায়, নানুর সাথে।”
“তোমার নানুকে জায়গা মত রেখে এসেছি।”
“মা এসব কি বলছ?”
“তুমি এখানে থাকতে চাইলে আমাদের বাড়ির পাশের নর্দমায় পরে থাকা খাবার খেতে হবে। তাই কথা না বলে রেডি হয়ে আস।”
রিতি কথা না বলে নিজের ঘরে চলে গেল। তারপর কিছুক্ষণ পর সে একটা লাল রংগের ফ্রক পরে বেড়িয়ে আসলো। “আমরা কোথায় যাচ্ছি?”- রিতি তার মার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।
“রাংগামাটি।”
৩
তারা প্রথমে একটা কাজি অফিসে ঢুকল। সেখানে রিতি একজন নতুন বাবা পেল। রিতি যেন এ ঘটনার পর একদম চুপ হয়ে গেল। ফাহিম আর রিতি পড়ে ক্লাস টেনে একসাথে। তারা কখনো ভাই-বোন হিসেবে কথা বলে নি। তাদের মধ্যে মিলমিশও নেই। ট্যুরের মধ্যেও তাদের মধ্যে আন্তরিকতা দেখা গেল না। মনে হয় রিতি তাকে ছোট ভাই হিসাবে মেনে নিতে পারেনি।
রিতি বসেছে ফাহিমের পাশে। খোরশেদ সাহেব আর রিতির মা বসেছে একসাথে। বাসের নাম স্টারলাইন ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস। খোরশেদ সাহেব একবার রিতির মার সাথে কথা বলেন, আর মাঝে মাঝে রিতি আর ফাহিমকে কিছু জ্ঞান বিতরণ করেন। এভাবে তারা অর্ধেক রাস্তা পার করল আর বাকি রাস্তা পার করল ঘুমিয়ে।
রাঙ্গামাটি স্টেশনে পৌছানোর পর তারা একটা সি এন জি ভাড়া করল। তারা থাকার জন্য যে কটেজে গিয়ে উঠল।ক টজের নাম আমরণ আবাস। তারা খেয়ে দেয়ে সুয়ে পড়ল, যার যার ঘরে, কিন্তু রিতি ঘুমাতে পারলো না। তাই সে বারান্দায় চলে গেল হাটাহাটি করার জন্যে।
রিতি অনেক শক্ত মেয়ে। সে খুব কম জিনিসকেই ভয় পায়। তার বয়সী মেয়েরা তেলাপোকাকে যমের মত ভয় করে, আর সে এসব নিজের শরীরে চলাফেরা করার জন্য ছেড়ে দেয়। হঠাৎ তার চোখের সামনে দিয়ে একটা আলো দৃশ্যমান হয়ে আবার অদৃশ্য হয়ে যায়।
তখন হিমানের যান ক্রাস করলো দুটি পাহারের মধ্যে, একটা ঝরণার পাশে। ক্রাশ বললে ভুল হবে; একটা বাশের সাথে শুধু বাড়ি খেয়েছে। আর এতেই তাদের অবস্থা খারাপ। তারা দুজনেই উপরের দিকে পা দিয়ে উলটে আছে। এ অবস্থায় তাদের কানে অনেক দরজা একত্রে শব্দ ভেসে আসল। সব শেষে যানের প্রধান দরজা খুলল। যানটি অফ হবে এমন সময় এইচ আর কথা বলল “আপনারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যান ত্যাগ করুন। আপনাদের হাতে ১০ মিনিট আছে। মনে রাখবেন আমরা যে গ্রহে এসেছি সে গ্রহের নাম পৃথিবী।”
“কি? আমরা কোথায়? পৃথিবীতে? এইচ আরের মাথা পুরু খারাপ হয়ে গিয়েছে। পৃথিবীতো অনেক আগেই ধংস হয়ে গেছে। তাই না ক্রিক?”- হিমান সন্দেহের সাথে যান থেকে বের হতে হতে ক্রিককে জিজ্ঞাস করল।
ক্রিক তার জ্ঞান ঘাটতে লাগল। তার জ্ঞানে একটা চাপটার আছে যেটা সে এখোনো খুলেনি। আজ ফাইলটা তাকে খুলতে হবে। কারণ তাকে এরকম নির্দেশনাই দেয়া আছে। সে প্রথম আকাশের দিকে তাকালো, তারপর পাহার দুটির দিকে তাকালো, তারপর হিমানের দিকে তাকালো।
হিমান বিরক্তির সাথে বললো- “কি করবে তাড়াতাড়ি কর। এত ভাব নেয়ার তো আমি কিছু দেখি না।”- তারা যানটা থেকে দূরে যেতেই, যানটা যেন একেবারেই ভেনিশ হয়ে গেল
ক্রিক ফাইল টা খুললো। তারপর তার খিচুনীর মত শুরু হল। সে তার আশে পাশের ভূমি কাপিয়ে নড়তে লাগলো। ক্রিক আস্তে আস্তে শান্ত হল। ক্রিককে হিমানের দেখে মনে হচ্ছে, ফাইলটা ঘাটাঘাটি করে সে অদ্ভূদ কিছু বিষয় জানতে পেরেছে।
হিমান বিষয়গুলি জানার জন্য হা করে আছে। তার মন অস্থির। তার চিন্তায় বারবার আসছে হয়তো তার বাবা-মা এখনো বেচে আছেন, কারণ পৃথিবী এখনও বেচে আছে।
ক্রিক অনেক্ষণ পর মুখ খুলল। আর যা বলল তা মোটামুটি অলৌকিক ছিল হিমানের জন্য।
“আমরা পুরো গ্যালাক্সি ঘুরে আবার পৃথিবীতে ফেরত এসেছি, তবে সময়ের অনেক আগে।”- ক্রিক হাপাতে হাপাতে বলল।
“তুমি কি বলছ আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আমরা আবার ঐ জায়গাই কিভাবে আসতে পারি যা ধংস্ হয়ে গেছে? তাও আবার সময়ের আগে?”
“সম্ভবত আমরা কোন ওয়ার্ম-হোলে ঢুকেছিলাম”
তার মানে কি এই যে- “আমার বাবা- মা জীবিত?”
“এটাও হতে পারে তাদের এখনো জন্ম হয়ও হয় নি।”
হিমান যে স্যুটটা পড়ে আছে তার খাস বৈশিষ্ট্য হল এটি পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে ধারকের আরামের চাহিদা নিশ্চিত করে তাই ক্রিককে হিমানের আশপাশ কি গরম না ঠান্ডা জন্য চিন্তা করতে হবে না। তার মূল চিন্তা খাবারের। ক্রিক হিমানকে নিয়ে পাহাড়ের নিচের একটা খোলা জায়গায় বসলো। তাকে কিছু কথা শোনাতে হবে। আর হিমানের সে কখা গুলোকে মন দিয়ে শুনতে হবে।
“হিমান তুমি এখন একটা জংগলে আছ।”- ক্রিক বলল।
“তা তো দেখতেই পাচ্ছি।”
“তোমাকে এখানেই অবস্থান করতে হবে।”
“তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? এখানে কেন থাকন, চল দেখি আমার বাবা মা কোথায়।”
“আমার আরকাইভে যা দেয়া আছে আমি তাই বলছি।”
হিমাযন চিন্তা করে বলল, “হতে পারে বড় কিছু, ঠিক আছে আমি এখানে থাকব, তবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য”
“তোমাকে কিছু জিনিশ শিখতে হবে এবং খুব তাড়াতাড়ি। আর সেগুলো সব প্রাক্টিকাল জ্ঞান। আর তোমাকে সবচে ভালো করে যে জিনিশটি শিখতে হবে সেটি হলো মেয়েদের সাথে কথা বলা।”
“মানে? তুমি কি আমার সাথে মজা করছ?”
Comments (0)
See all