08-08-13 হামিদের যখনই এমন মাথা খারাপের মত হয়, তখনই সে দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকে। তার বর্তমান অভিভাবক তার চাচা শফিকুল আলম। তাকে প্রায়ই হামিদের এ সকল কর্মকান্ড সহ্য করতে হয়। হামিদকে তিনি এ সম্পর্কে কিছু বলতেও পারেন না। হামিদের সাথে যা হয়েছে তিনি বিষয়টাকে বোঝার চেষ্টা করেন। তিনি এটা নিয়ে তার সাথে কথা বলতে চান, কিন্তু পারেন না।
হামিদ রাতে খাবার খেতে দরজা খুলল না। আলম সাহেব তাকে কয়েকবার ডাকলেনও। কিন্তু হামিদের কোন সাড়া পাওয়া গেল না। আলম সাহেব ধৈর্য্যশীল বলেই হামিদকে খুব সহজেই মাফ করে দিচ্ছেন। তিনি আসল বাবা না হয়েও হামিদকে বাবার ভালবাসা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু হামিদ কেন তাকে অবহেলা করে তিনি বুঝতে পারেন না। হামিদের কারণেই হোক আর অন্য কোন কারণেই হোক, আলম সাহেবও রাতে কিছু খেলেন না। হামিদের আচরণে তার মন অনেকটা খারাপ হয়েছে। তিনি মন ভাল করার জন্য ছাদে চলে গেলেন।
ছাদের দরজা খুলেই তার মন ভাল হয়ে গেল। কি সুন্দর জোছনা। তিনি একটা রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলেন। এত সুন্দর একটা পরিবেশ সব সময় থাকে না। তিনি গোলগাল চাদটার দিকে তাকালেন। জোছনা নামটা নিয়ে তার একটা গানও মনে পরছে। গানটা তিনি গুনগুন করে গাইছেন। “বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে, আসি আসি বলে জোছনা ফাকি দিয়েছে।” মিডল ক্লাস একটা গান। তার কেন এ ধরনের গান মনে আসবে? এমন সময় তিনি তার চোখটা বন্ধ করে ফেললেন।
আলম সাহেব ঘড়ি দেখছেন। রাত একটা বাজে। তিনি একটা বিরাট বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। কেন দাড়িয়ে আছেন তা তার কাছে স্পষ্ট নয়। কারন একটু আগে তিনি তার বাড়িতে একটা রকিং চেয়ারে বসে ছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছেন। তার মাথার মধ্যে শুধু আছে, তাকে দরজায় কড়া নাড়তে হবে। তিনি কড়া নাড়লেন। ভেতর থেকে কেউ একজন কিছু জিজ্ঞাস করলো। কি জিজ্ঞাস করল তা ঠিক বোঝা গেল না। কেউ দরজা খুলবে ভেবে তিনি বাইরে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। কিন্তু কেউ দরজা খুলল না, আর ২য় বার কেউ আওয়াজও করলো না। তিনি আবার দরজায় আঘাত করার জন্য এগিয়েছেন আর অমনি দরজা খুলে গেল। দরজা আপনাআপনি খুলেছে এমন মনে হল। আলম সাহেব ভিতরে ঢুকবেন নাকি চলে যাবেন বুঝতে পারলেন না। তিনি অসাভাবিকতায় বিশ্বাসী নন। আবার তিনি অযথা নিজের যুক্তি খরচ করতেও অলস। তাই কিছু না ভেবেই তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন।
তিনি যা আশা করে ছিলেন তা হল না। দরজাটা নিজে নিজে লাগল না। তাই তিনিই লাগিয়ে দিলেন।ভেতর থেকে নিশ্চয়ই কেউ দরজাটা খুলে দৌড় দিয়েছে। বিষয়টা নিয়ে আর না ভেবে তিনি জুতা খুলে ভেতরে তাকালেন, আর অমনি তার সামনের সোফা দিয়ে সাজানো ঘরটায় লাইট জলে উঠল। তার বুঝতে অসুবিধা হল না যে ওটা ড্রয়িং রুম। শুধু চোখের সামনে মানুষের অনুপস্থিতি ব্যাপারটাকে ভৌতিক করে তুলছে। তিনি বলে উঠলেন, হ্যালো! কিন্তু কোন জবাব পাওয়া গেল না। তিনি কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে সামনে এগুলেন। টেবিলের উপর পত্রিকা রাখা। তিনি পত্রিকার সামনের সোফায় বসে পরলেন। আজকের পত্রিকাটা তার পড়া হয় নি, তাই তিনি পত্রিকা হাতে নিলেন। পত্রিকাটা তার চোখে স্পষ্ট হয়ে উঠলে, তিনি দেখলেন লেখাগুলি বাংলা কিংবা ইংলিশে নয়। তারপর পত্রিকার লেখাগুলি হঠাৎ গায়েব হয়ে গেল। তিনি পত্রিকা হাতে নিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছেন। ডানদিকের একটা ঘর থেকে কেউ একজন বলল, আলম সাহেব এদিকে আসেন। আলম সাহেব অনেকক্ষন পর কারও আওয়াজ শুনতে পেয়ে সেদিকে গেলেন। বাইরে থেকে দরজাটি লাগানো। তিনি সিটকিরি খুলে ভেতরে তাকালেন। ভিতরের পরিবেশ পুরু আলাদা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। একটা আরামদায়ক ওয়াটার বেড। তিনি ভেতরে ঢুকে তাতে শুয়ে পরলেন। এমন সময় ঘরে একদল মানুষ প্রবেশ করলো। তাদের হাতে অস্ত্র। সে কিছু বুঝে উঠত এমন সময় তাকে গুলি করা হল। তার বুক ঝাজরা হয়ে গেছে। তাকে গুলি করে লোকগুলো চলে গেল।
আশ্চর্য! তার ব্যাথা লাগাছে। সপ্নে তো ব্যাথা লাগার কথা নয়। এবার তার পুরো বিষয়টা স্পষ্ট হল। হামিদ নামে কেউ কখনো ছিল না। সেটা ছিল সপ্ন। তিনি একজন পেশাদার খুনি। কত মানুষের প্রান তার হাতে গেছে। আজ তার প্রান দেহ ত্যাগ করছে। এটাই বাস্তব, যেখানে সে মারা যাচ্ছে। তার শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। শীতল ঘরে তার শরীর আরও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। একটা চাদর দিয়ে শরীরটা মোড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু তার কোন শক্তি নেই। এক সময় তার শাস নেয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। শরীরে একটা প্রশান্তি নেমে আসে।…
Comments (0)
See all